সিটিবাসে
প্রচণ্ড ভিড়। গাড়ির ঝাঁকুনিতে খুব সহজেই ঘষা খাচ্ছে মানুষের মাথা, পিঠ, হাত, উরু, বুক,
পাছা, ঠ্যাং, বিবেক, বুদ্ধি, হরমোন।
একটি বুদ্ধিমান
উকুন এক বিধবা তরুণীর লম্বা চুল বেয়ে বেয়ে নেমে আসছে। আসলে সে আগেই অশনিসংকেতের গন্ধ
পেয়েছিল।
প্রায়ই
এই মেয়েটিকে পাগলের মতো রাত জাগতে দেখেছে সে। চুলগুলি সামনের দিকে ছেড়ে দিয়ে একলা একলা
আয়নার সামনে হাসতে দেখেছে, নিজের হাত-পা নিজেই কামড়াতে দেখেছে অনেকবার।
বুদ্ধিমান
উকুনটি মহল্লার সব উকুনকে বিষয়টি অবগত করেছিল, কিন্তু কেউ পাত্তা দেয়নি । ওদের মতে,
তরুণীটি ভারি লোভনীয়! খাসা মাল। ঘিলু ভর্তি মাথায় গরম গরম রক্ত । তাছাড়া, নিরীহ মেয়েটি
মাথাও চুলকোয় না, ভিনেগারও লাগায় না, মেডিকের শ্যাম্পুও ঘষে না, এমনকি দুই নখে কাউকে
পিষেও মারে না। তাই এই এলাকা ছেড়ে দেওয়া উকুন-সভ্যতার পরিপন্থী।
বুদ্ধিমান
উকুনটি ওর জ্ঞাতিগুষ্টির রক্ষণশীলতা দেখে হতাশ হয়। অবশেষে একলা চলার দীক্ষা নিয়ে দেশের
বাড়ির মায়া ত্যাগ করে।
উকুনটি
ইতিমধ্যে অনেকবার চেষ্টা করেছিল মাথান্তর হওয়ার। কিন্তু মাথা কোথায়? প্রব্রজন কি অতই
সহজ? পা ফোঁসকে গেলে কোথায় গিয়ে পড়বে তার ঠিক নেই। পদে পদে লুকিয়ে থাকে মৃত্যু, নখের
আতঙ্ক। কিন্তু পরিস্থিতি যা! যে-করেই হোক ভিটেমাটি তো ছাড়তেই হবে।
কাল রাত
থেকেই মেয়েটিকে সে লক্ষ করে চলেছে। কেমন যেন ভৌতিক ভৌতিক মনে হচ্ছিল তাকে। একবার হাসে,
একবার কাঁদে, একবার নখ কামড়ায়, একবার চুল টানে, একবার দেয়ালে মাথা ঠোকে। তারপর সকাল
হতে না হতেই বেরিয়ে যায় অজানা ঠিকানায়। ফিরবার পথে সে সংগ্রহ করে একটা লম্বা দড়ি। হ্যাঁ,
কাঁধের এই কালো ব্যাগটিতেই সে সযত্নে ভরিয়েছে সেটা।
প্রচণ্ড
ভিড়ে ভারাক্রান্ত সিটিবাস এগিয়ে চলে ।
উকুনটি
ধীরে ধীরে চুল থেকে বেরিয়ে ব্যাগটির ফিতার ওপর উঠে দাঁড়ায়। ঝুলন্ত অবস্থাতেই সে লাফ
দিতে চায় পাশেই দাঁড়ানো প্রৌঢ় লোকটির ঘাড়ে। কিন্তু পারে না। বাসে যতই ঠেলাঠেলি হোক,
সে তো আর জাদু জানে না, আর তা ছাড়া সে জিম্নাস্টও নয় । সে একটা সাধারণ উকুন মাত্র।
বুদ্ধিমান
উকুনটি প্রাণের ঝুঁকি না নিয়ে অবশেষে দু-পা পিছিয়ে আসে। তারপর গলার পাশ দিয়ে নামতে
নামতে মেয়েটির ঠিক বুকের উপর চড়ে বসে। স্তনের
শৃঙ্গের ওপর দাঁড়িয়ে সে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাকায়। সে জানে, ওকে আর ঝাঁপ দিতে হবে
না। এই প্রচণ্ড ভিড়ে কারো-না-কারো কনুই এসে ঠেকবেই সেখানে।