Wednesday 19 February 2020

এক অন্যরকম হোলির গল্প

এক অন্যরকম হোলির গল্প
বরুণ কুমার সাহা, গুয়াহাটি 

অপরূপা অনেকক্ষণ ধরে নিজেকে আটকে রেখেছে শোবার ঘরে| প্রতিজ্ঞা করেছে সে, জীবনে কখনো হোলি খেলবে না | মাখবে না কখনো রঙ তার ধবধবে গালদুটিতে | কারণ সেই গালে রঙ দেওয়ার অধিকার কেবলমাত্র অঞ্জনের |
গেলবার তো অঞ্জন তাকে পুরো লাল করে দিয়েছিল | আরো গাঢ় লাল হয়ে উঠেছিল সে, লজ্জায় |
কিন্তু এবার ?
এবার কী হবে ?
আদৌ কি সে অঞ্জনের সম্মুখে দাঁড়াতে পারবে ?

হাঁটুতে থুতুনি সংস্থাপন করে থমথমে ঘরটিতে অপরূপা হাঁ করে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে | চোখ দিয়ে টস টস করে গড়িয়ে পড়ছে জল, ভিজে যাচ্ছে হাঁটু , কিংবা ভিজে যাচ্ছে তার সমস্ত স্বপ্ন !

এমন সময় ঝড়ের বেগে ঘরে প্রবেশ করল অঞ্জন| লাল আবিরে ঢাকা তার চোখ, কান , নাক, গাল, মাথা, হৃদপিণ্ড |

অপরূপা ছুটে এল, খোসে পড়ল তার অঙ্গবস্ত্র , কিন্তু সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই | অঞ্জনের প্রশস্ত বুকে নিজেকে গুঁজে দিয়ে হাউ হাউ করে ফেটে পড়ল সে |

অঞ্জন নিস্তেজ, নিরুত্তাপ |

অপরূপা একবার মুখ তুলে অঞ্জনের দিকে তাকায় | সেই একই মুখ, একই চোখ, একই মন | অথচ দৃষ্টির কি ফারাক ! অঞ্জন কি আজ তাকে রাঙিয়ে দেবে না? চেপে ধরবে না তাকে বুকের মাঝে ?
সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নেয় অপরূপা |
কেনই বা ধরবে ! কী করেই বা ধরবে !

হঠাৎ রঙের ফাঁক দিয়ে অঞ্জনের হালকা হাসি ভেসে ওঠে | যেন, খেলব হোলি রঙ দেব না তাই কখনো হয় !
হতে পারে অঞ্জনের আঙুলে আজ রিঙ সিরিমনির আংটিটা নেই, নেই অপরূপার নিজ উপার্জনে দেওয়া সেই দামি হাত ঘড়িটা | কিন্তু তাই বলে কি এই হোলির দিনে অপরূপার ধবধবে গালদুটো এমন শুকনো-ফ্যাকাশে থাকবে !

অপরূপা মুখ তুলে অঞ্জনের দিকে তাকিয়েই ছিল | অঞ্জন উপায় না পেয়ে তার ডান গালটা প্রথমে ঘষে দেয় অপরূপার ডান গালে, তারপর বাঁ গালটা তার বাঁ গালে ... তারপর আস্তে আস্তে তার মুখটা ঘষতে থাকে অপরূপা কান, গলা , স্তন, পেট ... সমস্ত শরীরে |
স্খলিতবসনা অপরূপা কাঁদতে কাঁদতে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে অঞ্জনকে |
অঞ্জন কিন্তু প্রিয়তমাকে জড়িয়ে ধরে না , ধরতে পারে না |
গেল ফেব্রুয়ারি মাসে কাশ্মীরের দশজন সন্ত্রাসবাদী মারা পড়ে | সেই দশজনের মাথার বিনিময়ে মেজর অঞ্জন হাসি মুখে ফেলে এসেছিল তার হাতদুখানা |