Monday 24 August 2020

একটি আনস্মার্ট কবিতা

একটি আনস্মার্ট কবিতা, 11 August 2020

বরুণ কুমার সাহা, গুয়াহাটি

আধমরা বাপটা শহরের গলি গলি ফল-মূল বেচে বেচে ক্লান্ত
বুক ফাটা কাশি নিয়ে করোনা শিবিরে আছে, শুনেছি এখনও নাকি জ্যান্ত
মা আর আমি ঘরে কচু খেয়ে টিকে আছি, হাড়ি ভেসে চলে যায় বন্যায়
ঘর দিয়ে জল ঝরে, বই-খাতা ভিজে যায়, মায়ের আঁচলও ভেজে কান্নায়
উঠোনে নৌকো ঠেকেছে এমেলের, চাল-ডাল দু-প্যাকেট বিস্কুট
সাতজন রিপোটার বলে ‘ত্রাণ ধরে থাকো, চলবে দুমিনিট ফটোশুট’
দু-আঙুলে ত্রাণ তুলে ব্যালেন্সটা সামলে ব্লাউজের ছেঁড়া ঢেকে হাসে মা
সবার অলক্ষে উঠোনের কাদা-মাটি পায়ের নখ দিয়ে ঠাসে মা…
আমি পড়ি শহরের নামি ইশকুলটায় বিপিএল কোটা ছিল ভাগ্যে
টিফিনে মুড়ি আর গোলাপিঠা রোজদিন, ওরা ভালো কিছু খায় খাক-গে
আমি ভালো ছাত্রী পায়েছি বৃত্তি টিচার বলেছিলেন ভেরি গুড
খুশি মনে ভাবি শুধু বাবা কাল দেবে তো টিফিনে জোড়া ক্রিম বিস্কুট!
কতদিন হয়ে গেল ইশকুলে যাই না, নাম কাটা গেছে কি না কি ঠিক!
শুনেছি অনলাইনে সব কিছু চলছে, ইংলিশ, জিকে, ম্যাথ, মিউজিক
যাদের বাবার আছে বড় স্মার্ট ফোন তারা রোজ করে ক্লাস দিব্বি
ফোনেতেই শিক্ষা, পরীক্ষা, এ্যাটেন্ডেন্স বিদ্যা গেলানো হয় হ্যাব্বি
হারাধন কাকাটার আছে এক ফোন তবে শহরেই কাজ, বেশি থাকে না
থাকলেও যন্ত্রের ক্যামেরাটা নষ্ট, ব্যাটারির চার্জ বেশি থাকে না
জীবনটা জুম করে হল না দেখা আর মিট করা হল না গুগুলে
কান ফাটা ঠাট্টা বুকে বাজে দিনরাত ‘খা তোরা পেচ্ছাপ গু গুলে’
আমি যত মাথা তুলে উঁকি দেই সামনে সব হাসে বলে আনস্মার্ট তুই
জীবন শৈলীটা কেন এত ডার্টি ভাষাতে আধুনিক আর্ট কই?
পায়ে কেন কাঁদা মাখা ? গায়ে দুর্গন্ধ! ডার্টি কোথাকার শেইম শেইম
আমি তবু হাসি মুখে শিখে নেই সব কিছু, হঠাৎ ল্যাং মারে সিস্টেম!
নিজ গালে ঠাস ঠাস চড় কষি দিনভর, কতকাল কোন ঠাসা রইব
উঠোনে ছিপ ফেলে মাছ ধরি দিনরাত পেটটাকে কত আর সইব?
তোমরাই বড় হও, শিক্ষাটা বন্ধু কিনে নিয়ে ডুকিয়েছ পকেটে
আমরা চাঁদটাকে মামা বলে ডাকব তোমরা চন্দ্রে যেও রকেটে…

Tuesday 2 June 2020

পল্টুরামের বেত্তান্ত, বরুণ কুমার সাহা


পল্টুরামের বেত্তান্ত
বরুণ কুমার সাহা, ৩০ মে ২০২০


পঞ্চগ্রামের ঘঞ্চুরামের পুত্র, নাম পল্টু
সবাই বলে মস্তকে ওর ঢিলে নাকি বল্টু
সর্বক্ষণই আবোল তাবোল, উল্টো চলন বলন
বৃদ্ধরা কয় এ বজ্জাতের নিত্য পদস্খলন
গামছা কোষে লেংটি পরে, লম্বা লম্বা কেশ
পাঠশালাতে না গিয়ে ও ছাগল চরায় বেশ
বকুল বাবুর পুস্কনিতে ছিপ ধরে দেয় টান
হংসগুলোর কণ্ঠ চেপে করায় ঠেসে চান
ভয় ডর নাই অন্তরে ওর, নাই কোনো সংশয়
বাটুলধারী পল্টু ফেরে আম্রকুঞ্জময়
বৃক্ষশাখায় লম্বা হয়ে গগন পানে চায়
কঞ্চি দিয়ে পৃষ্ঠ ঘষে, দুহস্ত চুলকায়
পালক দিয়ে সুড়সুড়ি দেয় চ্যাপ্টা নাসারন্ধ্রে
পাল্লা দিয়ে হাঁচ্চি ছোটে দিল্লি-বোম্বে-অন্ধ্রে
নদীর ধারে বালুর চরে ছোটে সকল ভুলে
ঘন ঘন বগল বাজায় একখানা ঠ্যাং তুলে


গ্রামে যেবার ডাকাত এল লুট হল সব বাড়ি
রুদ্ধ কপাট আতংকিত সমস্ত নরনারী
আত্মস্বার্থে ত্রস্ত সবাই শঙ্কা প্রান্তে প্রান্তে
পল্টু ফেরে সকল লোকের হাল হকিকত জানতে
পথ্য আনে তথ্য আনে পুলিশ ডাকতে ছোটে
গ্রাম্য লোকের এতক্ষণে দুই চক্ষু ফোটে
পল্টুরামের জাগরণে সবাই এবার তৈরি
আপন সবাই পরস্পরের কেউ কারো নয় বৈরী
এবার ব্যাটা ডাকাত এলে পাবে জামাই আদর
পল্টু এখন মধ্যমণি নয় গর্ধব বাঁদর
এমনি করেই মহামারী, দুর্ভিক্ষ, বন্যা
বিপদ হলেই পল্টু আছে, সবাই শরণাপন্না
অন্নপ্রাশন, শ্রাদ্ধ, নিকা, শ্মশান, ভাসান, পুজো
পল্টু ছিল, পল্টু আছে, পল্টু রবে আজও

এভাবেই দিন কাটল অনেক সময় গেল বেশ
গ্রামের ছেলে চাকরি পেল ছুটল কেউ বিদেশ
পুত্রবধূ জুটল ঘরে কেউবা হল মাতা
হারাধনের ছেলেটি আজ বিশাল বড় নেতা
শকুন্তলা মাস্টারনি পাশ করেছে টেট
রোহিদুল্লা তামাক বেচেই অনেক বড় শেঠ
কৃষিকম্মে চিন্তামণি, লতিফ বেচে শাক
জগৎরামের মুদিখানা, রবি চালায় ট্রাক
কেউবা হল ধর্ম পাগল মনটা কোরান গীতায়
কেউবা আবার অসময়েই উঠল সোজা চিতায়


কতটা যুগ পাল্টালো আর কাটল কত কাল
পল্টু এখন বৃদ্ধ তবু রইল একই হাল
এখনো সে আকাশটাকে জিভ দিয়ে খায় চেটে
পুকুর পারে নাচতে থাকে পঙ্ক ঘেঁটে ঘেঁটে
পাখির সুরে শিস বাজিয়ে হাততালি দেয় জোরে
বেঞ্চি পেতে নিদ্রামগ্ন চৌপথিটার মোরে
রাতের বেলা গলির কুকুর পেছন পেছন ছোটে
বৃদ্ধ পল্টু হাপসে গেলে গালগুলো দেয় চেটে


বসন্তকাল পূর্বে সকল চলছিল ঠিকঠাক
করোনাবির্ভাবের ফলে ঘটল দুর্বিপাক
লকডাউনের বন্দি দশায় সকল গ্রাম্য লোক
সেই সময়েই ধরল ঠেসে পল্টুকে ওই রোগ
গলায় ব্যথা শ্বাস কষ্ট বুক করে ধড়ফড়
হাচ্চি-হাচ্চি-হাচ্চি ছোটে সদ্দি কাশি জ্বর
দুর্বলতা, মাথার ব্যথা, চুলকে থাকে জিভ
রেজাল্ট এল পল্টুরামের করোনা পজিটিভ
চোদ্দ দিবস কোয়ারেন্টাইন মনটা কি আর মানে ?
মুক্ত আকাশ কুকুর পুকুর গ্রামটা শুধু টানে
অর্ধমাসে বন্দি দশার বাঁধন হল ঢিল
হস্তে দিল সরকারি ওই পেশেন্ট মার্কা ছিল
সুস্থ হয়ে মুক্ত মনে পল্টু ফেরে গ্রাম
দূর থেকে সব মানুষ বলে ছিঃ ছিঃ রাম রাম
পাড়াপড়শি গ্রামের মানুষ কেউ চায় না মানতে
বলে, ব্যাটাই রোগ ছড়াবে গ্রামের প্রান্তে প্রান্তে
কেউ শাঁসালো পল্টুকে তো কেউ ঝাড়ে ভাষণ
গ্রামবাসীরা সবাই মিলে দিল নির্বাসন
পল্টু শোনে সবার কথা গ্রামের পানে চায়
আপন মনেই হাসতে থাকে বিড়বিড়িয়ে যায়


একটা ছিল পোড়ো বাড়ি গ্রাম যেখানে শেষ
থাকত সেথায় কুকুর এবং ষাঁড়গরু আর মেষ
দু-তিনদিনেই ভাব জমিয়ে পল্টু করে বাস
পল্টুরামের সংসারটা অদ্ভুত সার্কাস
ষাঁড় গরুটার পৃষ্ঠে চড়ে সুড়সুড়ি দেয় কানে
কুকুর ভেড়া সাপটে ধরে গান ধরে আনমনে
যত্ন করে চুলকে দেওয়া, আদরে নাই ত্রুটি
সকাল সন্ধ্যা সবাই মিলে ভাগ করে খায় রুটি


গ্রীষ্ম কালেই বর্ষা এল মেঘলা জ্যৈষ্ঠ মাস
হঠাৎ সেদিন ঘূর্ণিঝড়ে নামল সর্বনাশ
ভাঙল দেয়াল উড়ল চালা প্রচণ্ড আমফান
ভাঙল বৃক্ষ, ভাসল পথিক, বাঁধ ভেঙে ধায় বান
ঢিবির ওপর চারটে প্রাণী মস্তকে নেই ছাদ
মাথার ওপর মৃত্যু নাচে দারুণ বজ্রপাত
কপাল গরম, ঠান্ডা হাতেই আসতে করে মাপে
বৃষ্টিভেজা পল্টুটা আজ ঠকঠকিয়ে কাঁপে


একটা সময় বৃষ্টি থেমে সুজ্জি চড়ে মাথায়
পল্টুরামের শরীরখানা রইল পড়ে সেথায়
ঠ্যাঙের
  নিচে ষাঁড় গরুটা রাখল তারে ঢেকে
মেষটা গায়ের পশম দিয়ে জাপটে ধরে তাকে
দূর থেকে সব গ্রামবাসী কয় মরল বুড়ো কাল
কুকুর তবু চাটতে থাকে পল্টুরামের গাল …

https://l.facebook.com/l.php?u=http%3A%2F%2Fthegangchil.com%2F%25e0%25a6%25aa%25e0%25a6%25b2%25e0%25a7%258d%25e0%25a6%259f%25e0%25a7%2581%25e0%25a6%25b0%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25ae%25e0%25a7%2587%25e0%25a6%25b0-%25e0%25a6%25ac%25e0%25a7%2587%25e0%25a6%25a4%25e0%25a7%258d%25e0%25a6%25a4%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25a8%25e0%25a7%258d%25e0%25a6%25a4%2F%3Ffbclid%3DIwAR3RCIqYj32Chicn_RswdmT93QyhZcrcGxlgZU98p4OI0O0rg-LK3DV059Y%23.XtJ4ZlA1r_Y.whatsapp&h=AT2gzQ26tuIAXMsns2Fv72LLS-oKZ88ZFgGPL1pegei574mUlX4tloVH-BtHChM4BC9Ietovb9F8S2bZ0YMknYFGdLNLA0P7XtcMggN7WX8YBsHRjrljjjrPek8cP3hSK14E6beVuuNMssDc5jK9Pg


Monday 18 May 2020

পরিযায়ী! আহা কি সুন্দর নামটা


পরিযায়ী! আহা কি সুন্দর নামটা
বরুণ কুমার সাহা, গুয়াহাটি, অসম ১৮/০৫/২০২০

পরিযায়ী! আহা কি সুন্দর নামটা
নামেতেই ডুবে আছে জীবনের দামটা
পিঠে বেঁধে শিশুধন মস্তকে বোঁচকা
হেঁটে চলে তাহারা পায়ে নিয়ে ফোসকা                           
ব্যালেন্সটা ঠিক রেখে এরা সব হেঁটে যায়
কপালেতে ঘাম ঝরে জিভ দিয়ে চেটে যায়
জ্যৈষ্ঠের রোদ-ঝড়ে শুখিয়ে-ভিজিয়ে
ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বলে ‘কুছ কিজিয়ে’
হাজার বছর ধরে হেঁটে চলে এরা সব
লোকে বলে পরিযায়ী-শ্রমজীবী যতসব
ভুলে গেছে কবে তারা করেছিল চান-টান
প্রলয়ে-তাড়িত এতো নাই দিশা বল টান
খসে পড়ে আলগোছে কোমরের প্যান্টটা
শরমটা উড়ে গেছে কী ভীষণ ন্যাংটা
শোনেনি কখনও ওরা ইকোনমি-গ্রাফরেট
শুনেছে শুনেছে শুধু গর্জায় ভুখা পেট
ধর্মটা বেঁচে দিয়ে চায় এক মুঠো ভাত
যাযাবর সংসার, আস্তানা ফুতপাত
ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই পথ ছাড়া ঠাঁই নাই
ঘুমন্ত শিশুটার শৈশব ছিনতাই
ব্লাউজটা ফেটে গেছে ইজ্জত ঘন্টা
শিশুরা হাপসে যায় চুষে স্তনটা
এভাবেই দিন যাবে কত কাল কাটবে
কোল থেকে নেমে গিয়ে শিশুটাও হাঁটবে
যুগে যুগে ঘুরে চলে সময়ের কাঁটাটা
পাল্টায় সভ্যতা,
তবু,
থামে না

হাঁটাটা !   



Friday 27 March 2020

করোনা মঙ্গল


করোনা মঙ্গল
বরুণ কুমার সাহা, গুয়াহাটি, ২৭/০৩/২০২০


মরণের শঙ্কায় মরি রোজ কী জ্বালা!
বসন্ত, কুষ্ঠ, প্লেগ, ফ্লু, ইবোলা
নিপা এইচ-আই-ভি কত নানা ভাইরাস
হেপাটাইটিস জিকা রোটা নোরো ছাইপাস
এদের আতঙ্কে হার মানে জঙ্গি
মশক-বাহনে জোটে ম্যালেরিয়া ডেঙ্গি
শত ভাগ ছোট এরা সূচাগ্র বিন্দুর
প্লেগ-হান্টারা ফেরে চাপিয়া ইন্দুর
এখনও সময় আছে জনে জনে বলিও
স্নায়ুতন্ত্রে ঢোকে চুপচাপ পোলিও
পক্সের ভাইরাস ভেরিসিলা জোস্টার
করোনাটা শেষমেশ মাস্টার-ব্লাস্টার


করোনাকে কিছুতেই বশে রাখা যায় না
জৈব অস্ত্র এটা ভেবেছিল চায়না
ছিনিমিনি খেলেছিল ভেঙেছিল ডিএনএ
ভেবেছিল করোনাটা থেমে রবে উহানে
সমুদ্র পেরিয়ে আজ এই ভাইরাস
সব দেশে ঢুকে গেছে চালিয়েছে সন্ত্রাস
সভ্যতা-শিখরে ইতালির রোমটা
ভেবেছিল করোনায় ছিঁড়বে কী লোমটা ?
পিতা-মাতা-সন্তান সব গেছে ভাসিয়া
কাঁদিতেছে জার্মান কাঁদিতেছে রাশিয়া
তেল ধুয়ে জল খাবে ধনী দেশ ইরানে
আমরা উপায় খুঁজি গোমূত্র, কোরানে
কিছুতেই এদেশের কাবু নয় মনটা
নগর কীর্তনে থালা-বাটি-ঘন্টা
ক্রিকেট খেলার ধুম পাড়াতে পাড়াতে
কেহ বিজ়ি চাল-ডাল ভরাতে ভরাতে
পুলিশের ঘুম নেই সেবিকা আতঙ্কা
কেহ খায় তেলে-ঝোলে ডলে কাচালঙ্কা
নববিবাহিতাদের রোজ রোজ হানিমুন
পুরনো দম্পতির কাটা ঘায়ে ছেটে নুন
অনেকেই ঘরে বসে করে মনরঞ্জন
ফেসবুকে পোস্টায় নানা পদ ব্যঞ্জন


যে শ্রমিক দূর দেশে গিয়েছিল কামাতে
ঘরে তার চাল নাই, খই নাই ঝামাতে
ঘর কোথা খুঁজে পাবে ঘরদোর নাই যার
ব্ল্যাক করে অনেকে হ্যান্ড-সেনিটাইজার
স্বাস্থ্যকর্মীরা খেটে চলে দিন ভর
মালিকের গর্জন খালি করো ভাড়া ঘর !
অণু করোনার ভয়ে আমেরিকা কাঁপছে
দুনিয়াটা অসহায় Who-who করে কাঁদছে
মানুষ মানুষকে পারবে কি বাঁচাতে?
লক-ডাউন বিশ্ব মনুষ্য খাঁচাতে
সোশিয়াল ডিস্টেন্স নিঃশ্বাসে শঙ্কা
ফুসফুসে বাজে রোজ মরণের ডঙ্কা


প্রাণীকূল দিনরাত প্রাণখুলে গান গায়
এফিল টাওয়ারে রোজ কাক এসে হেগে যায়
শান্তিতে ঘুম পারে লন্ডন পুলটা
ব্রিটেনের রাজা ভাবে কোথা হল ভুলটা
হরিণেরা দল বেঁধে নগরে ফিরে যায়
জানালার ফাঁক দিয়ে বাপদাদা ঘুরে চায়
শান্ত ধরিত্রী, নদীনালা আর বন
জমিতেছে তুষার কমিতেছে কার্বন
কংক্রিট ঢেকে দিয়ে ঘাসবন ছড়াল
ধর্ষিতা বসুমতী সোজা হয়ে দাঁড়ালো
সব কিছু আগে থেকে যেন ছিল ধার্য
করোনা তুমি তো ছিলে অতি অনিবার্য
ধ্বংসের পুরোহিত মনুষ্য শুনে যাও
মৃত্যুর ঘন্টা কান দিয়ে গুনে যাও
লিখে রেখো এটা এক অদ্ভুত পরিহাস
মনুষ্য কাঁদিতেছে, হাসিতেছে ভাইরাস


Wednesday 19 February 2020

এক অন্যরকম হোলির গল্প

এক অন্যরকম হোলির গল্প
বরুণ কুমার সাহা, গুয়াহাটি 

অপরূপা অনেকক্ষণ ধরে নিজেকে আটকে রেখেছে শোবার ঘরে| প্রতিজ্ঞা করেছে সে, জীবনে কখনো হোলি খেলবে না | মাখবে না কখনো রঙ তার ধবধবে গালদুটিতে | কারণ সেই গালে রঙ দেওয়ার অধিকার কেবলমাত্র অঞ্জনের |
গেলবার তো অঞ্জন তাকে পুরো লাল করে দিয়েছিল | আরো গাঢ় লাল হয়ে উঠেছিল সে, লজ্জায় |
কিন্তু এবার ?
এবার কী হবে ?
আদৌ কি সে অঞ্জনের সম্মুখে দাঁড়াতে পারবে ?

হাঁটুতে থুতুনি সংস্থাপন করে থমথমে ঘরটিতে অপরূপা হাঁ করে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে | চোখ দিয়ে টস টস করে গড়িয়ে পড়ছে জল, ভিজে যাচ্ছে হাঁটু , কিংবা ভিজে যাচ্ছে তার সমস্ত স্বপ্ন !

এমন সময় ঝড়ের বেগে ঘরে প্রবেশ করল অঞ্জন| লাল আবিরে ঢাকা তার চোখ, কান , নাক, গাল, মাথা, হৃদপিণ্ড |

অপরূপা ছুটে এল, খোসে পড়ল তার অঙ্গবস্ত্র , কিন্তু সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই | অঞ্জনের প্রশস্ত বুকে নিজেকে গুঁজে দিয়ে হাউ হাউ করে ফেটে পড়ল সে |

অঞ্জন নিস্তেজ, নিরুত্তাপ |

অপরূপা একবার মুখ তুলে অঞ্জনের দিকে তাকায় | সেই একই মুখ, একই চোখ, একই মন | অথচ দৃষ্টির কি ফারাক ! অঞ্জন কি আজ তাকে রাঙিয়ে দেবে না? চেপে ধরবে না তাকে বুকের মাঝে ?
সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নেয় অপরূপা |
কেনই বা ধরবে ! কী করেই বা ধরবে !

হঠাৎ রঙের ফাঁক দিয়ে অঞ্জনের হালকা হাসি ভেসে ওঠে | যেন, খেলব হোলি রঙ দেব না তাই কখনো হয় !
হতে পারে অঞ্জনের আঙুলে আজ রিঙ সিরিমনির আংটিটা নেই, নেই অপরূপার নিজ উপার্জনে দেওয়া সেই দামি হাত ঘড়িটা | কিন্তু তাই বলে কি এই হোলির দিনে অপরূপার ধবধবে গালদুটো এমন শুকনো-ফ্যাকাশে থাকবে !

অপরূপা মুখ তুলে অঞ্জনের দিকে তাকিয়েই ছিল | অঞ্জন উপায় না পেয়ে তার ডান গালটা প্রথমে ঘষে দেয় অপরূপার ডান গালে, তারপর বাঁ গালটা তার বাঁ গালে ... তারপর আস্তে আস্তে তার মুখটা ঘষতে থাকে অপরূপা কান, গলা , স্তন, পেট ... সমস্ত শরীরে |
স্খলিতবসনা অপরূপা কাঁদতে কাঁদতে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে অঞ্জনকে |
অঞ্জন কিন্তু প্রিয়তমাকে জড়িয়ে ধরে না , ধরতে পারে না |
গেল ফেব্রুয়ারি মাসে কাশ্মীরের দশজন সন্ত্রাসবাদী মারা পড়ে | সেই দশজনের মাথার বিনিময়ে মেজর অঞ্জন হাসি মুখে ফেলে এসেছিল তার হাতদুখানা |