তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা ও উলুখাগড়া
ReplyForward |
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা ও উলুখাগড়া
ReplyForward |
দুঃখহীনের কান্না
শ্রীবরুণ, ২৫/১০/২০২১
পুরাতন
লোহা-টিন-প্লাস্টিক সংগ্রহ করার জন্য ভাঙাচোরাওয়ালারা যেভাবে গলিতে গলিতে, রাস্তায়
রাস্তায়, পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে গ্রামে সুর তুলে চিৎকার করে বেড়ায়, ‘আছ়ে নাহি গো বাইত্যে…
পুরানা লুহা-টিন-প্যালাশ্টিক-বতল-প্যাফ়ার-কাগজ়’, ঠিক তেমনি অর্থাৎ একই সুরে যদুরামও
চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বেড়ায়। তবে তার সুর একই হলে কি হবে, কথাবস্তু আলাদা, ‘আছ়ে নাহি গো…
অন্তরের পুরানা বিশ্-ব্যাদ্না-দুক্খু-কশ্টো-জ়ালা…।’
ছোট্ট
গ্রামটির মানুষজন যদুরামের কাণ্ড দেখে হাসে। বলে ‘ব্যাটা আর জ়িনিস পাইল না, মাইন্শের
দুক্খু-কশ্টো কিনবার লিগা এই রইদে রইদে ঘুইর্যা বেরায়… হাল্লার ব্যাটা হাল্লা প়াগলের
পো… হা-হা-হা… ।’ কখনো আবার কেউ কেউ যদুরামকে ডেকে খুব চিন্তিত সুরে বলে, ‘অ-ই! অ-ই
জ়দুরাম! আমগোরে এই গেরামে কারোর্ই দুক্খু-মুক্খু নাই রে… তুই অন্যহানে জ়া… পাইর্লে
টাউনে জ়া… অইহানে মাইন্শের অন্তরগুলা দুক্খু-জ়ন্ত্রনায় ভইর্যা গেছেগা… জ়া অইহানে…
ভালো কামাই কইর্বার পাবু…।’ বলেই পাশের বন্ধুটির দিকে তাকিয়ে চোখ টেপে।
যদুরাম
বিস্ময়ের সঙ্গে লোকগুলোর দিকে তাকায়, তারপর বিড়বিড় করে কী যেন বলতে চায়, কিছু একটা
বোঝাতে চেষ্টা করে। তারপর আবার ছোটে।
পেছন
থেকে আবার অন্য কেউ হয়তো চেঁচিয়ে ওঠে, ‘জ়দুরাম রে, হুনলাম ফ়কুরা গেরামের মাইন্শের
অন্তরে নাহি ম্যাল্লা ব্যাদ্না জ়মা হয়া আছে, বেইচ্বার পাইর্তাছে না… তুই অইহানে
জ়া… শিক্গিরি জ়া।’
যদুরাম
ছোটে। চিৎকার করতে করতে আবার ছোটে, ‘আছ়ে নাহি গো… অন্তরের পুরানা বিশ্-ব্যাদ্না-দুক্খু-কশ্টো-
জ়ালা …।’
যদুরামের
দু-পায়ে দুই ধরণের চপ্পল। রং ও সাইজ়ও আলাদা আলাদা। রুক্ষ গোঁফদাড়িতে সবসময় ঢাকা থাকে
তার আসল চেহেরা। কাঁধে একখানা ছেঁড়া সিমেন্টের বস্তা নিয়ে সে বড় বড় চোখ করে চারদিকে
তাকায়। লোকজন আবার তামাশা শুরু করে, ‘কী ভায়া, তুমি যে দুক্খু-কশ্টো কেনার জ়ইন্যে
ঘুইর্যা বেরাইতাছো, তা সেগুলা রাইখ্বা কোন্হানে? তোমার তো ব্যাগ্ডাই ছ়েরা…’। কিন্তু
সেসব কথায় যদুরামের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। সে চিৎকার করে করে ছুটে চলে, ‘আছ়ে নাহি গো…
অন্তরের পুরানা বিশ্-ব্যাদ্না-দুক্খু-কশ্টো-জ়ালা…।’
সন্ধ্যা
হয়ে যায়। প্রতিদিনের মতো শূন্য ছেঁড়া সিমেন্টের বস্তা কাঁধে নিয়ে যদুরাম গ্রামে ফেরে।
সেঁচ বিভাগের পরিত্যক্ত ভাঙা ঘরটিতে বসে বসে সে পাউরুটি খায়, আর ভাবে, ‘দুক্খু জ়িনিসটার
এত্তো দাম! মাইন্শে বেইচ্বারই চায় না…।’ দুঃখ কেনার জন্য কিছু টাকাও জমিয়ে রেখেছে
সে। পকেট থেকে বের করে রোজদিনের মতো টাকাগুলো সে গোনে। তারপর আবার পকেটে গুঁজে রেখে
তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে। কাল আবার বেরোতে হবে তাকে। দুঃখের খোঁজে।
কিন্তু
তার ঘুম আসে না। হাহাকার করে। ফেটে যায় অন্তর। হা-হুতাশ করতে করতে একসময় হাউ হাউ করে
কেঁদে ফেলে। কপাল চাপড়ায়, ‘হায়-হায়! আমার ভাইগ্যে দুক্খু নাই রে, এহন আমি ক্যামনে
থাকুম রে… হায়-হায়-হায়! আমার অন্তরে এক ফোটাও দুক্খু নাই রে…।’
পরের
দিন আবার সূর্য ওঠে। লোকজন যদুরামকে নিয়ে মশকরা শুরু করে, ‘জ়দুরে, আরেকটু আগে আইলি
না ক্যান্ ভায়া… এইমাত্র আমি আমার ব্যাবাক্ পুরানা কশ্টো-জ়নত্রনা অইন্যের কাছ়ে
বিক্রি কইর্যা দিলাম রে… ইশ্ ইশ্ ইশ্… খানিক আগে আইলে তুই-ই কিন্বার পারতি রে…।’
যদুরাম
হতাশ-চোখে তাকায়, তারপর ‘হায়-হায়’ করতে করতে আবার ছোটে; গলিতে গলিতে, রাস্তায় রাস্তায়,
পাড়ায় পাড়ায়, গ্রামে গ্রামে চিৎকার করতে থাকে— ‘আছ়ে নাহি গো… অন্তরের পুরানা বিশ্-ব্যাদ্না-দুক্খু-কশ্টো-জ়ালা…।’
লাভলিনা, তোমার জন্য একটি ছড়া
শ্রীবরুণ,
৩০/০৭/২০২১
রাজধানীতে
বসে যারা চেঁচায় ‘ওহে চিংকি’
বাপজনমেও দেখিয়াছে বক্সিঙের ওই কি?
মেরি কমের
মুষ্টি যাদের আজও ছোঁয়নি নাক
অসম কন্যা
লাভলিনা আজ দিচ্ছে তাদের ডাক
পাঁচ ফুটি
দশ ইঞ্চি মেয়ের আকাশ সমান রূপ
ঘুষির শব্দে
ফুলন্ত আজ ভারতবাসীর বুক
বক্সিং রিং
ডাকছে তোমায় যাত্রা বহুদূর
অকালে আজ
বিহুর মেজাজ, বাজছে প্যাঁপার সুর।
আজও যারা
কন্যা-ভ্রূণের ঘটায় গর্ভপাত
তাদের মুখে
লাভলিনাদের হাজার পাঞ্চাঘাত।
ব্যর্থতা (অণুগল্প)
শ্রীবরুণ, গুয়াহাটি, ২৭/০৭/২০২১
‘ব্যর্থতা’ শব্দটি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
এর অর্থ নেতিবাচক বটে, কিন্তু হাড়ে হাড়ে চিনিয়ে দেয় যে জীবন কী জিনিস!
সেই ব্যর্থতা আমার জীবনে কতটুকু মানায় সেটা
মাপতে বসেছি আজ।
মানুষের গড় আয়ু যদি সত্তর হয় তবে আমি তার
অর্ধেক পথ হেঁটে ফেলেছি। সুতরাং সামান্য পরিমাণে হলেও তথাকথিত ‘জীবনাভিজ্ঞতা’ আমার
ঝুলিতে জমেছে। ইংরাজি বর্ণমালার তিনটি এইচ-এর প্রভাব মানুষের জীবনে নাকি সর্বাধিক।
হ্যান্ড, হেড ও হার্ট। হাত বেচারা নিজে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কখনো হৃদয়ের দাস,
আবার কখনো মগজের। ফলে কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হলে অথবা সিদ্ধান্ত নিতে হলে মূলত
এই হেড ও হার্টের মধ্যে লড়াই বাঁধে। মাথা যখন হৃদয়কে শাসন করে তখন হৃদয় বেচারার অবস্থা
হয় দেখার মতো। আর হৃদয় যখন মাথায় ভর করে তখন যুক্তি-তর্ক সমস্তকিছু ভুলে মস্তিষ্ক বেচারা
ভেজা বেড়ালের মতো লেজ গুটিয়ে বসে থাকে।
আমি-পদার্থটা আগাগোড়াই হৃদয়ের পোষ্যপুত্র।
মাথা মাঝেমধ্যে মাথা-চাড়া দিয়ে ওঠে বটে, তবে মাথা-খারাপ পর্যায়ে পৌঁছায় না কখনো। অনেক
বিজ্ঞজনদের বলতে শুনেছি, যখন কারো সঙ্গে মন কষাকষি হয় তখন নাকি নিজেকেই দোষারোপ করতে
হয়। অর্থাৎ ব্যাপারটা এভাবে ভাবা উচিত যে, হয় আমি অন্যের কথা বুঝিনি, অথবা অন্যকে নিজের
কথাটুকু ঠিকঠাক বোঝাতে পারিনি। কিন্তু সবসময় কি এসব পণ্ডিতি খাটে? সেই অন্যকেউ, যাকে
তুমি বুকের মধ্যে গুঁজে রাখো সবসময়, সে যদি তোমাকে জড়িয়ে ধরে অন্যের দিকে চেয়ে থাকে?
তাহলে?
ধ্যাৎ!
কী যে সব ভাবছি। হার্টফেল করলে অথবা মাথা-খারাপ হলে বুঝি এমনটাই হয়!
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার বুদ্ধির গোঁড়ায় ধোঁয়া
দিয়ে কাকের-ঠ্যাং বগের-ঠ্যাং যা পারি লিখলাম। অভ্যেস নেই যে, তাই লেখাটা বিশ্রী মনে
হচ্ছে। কী লিখলাম, সেটা হয়তো কাল নিজেই বুঝব না। হয়তো ছিঁড়ে ফেলব। তবু লিখলাম। ইচ্ছে
হল। তাই।
আর হ্যাঁ, এটুকুও হয়তো লিখতে পারতাম না,
গলায় দড়ি দিতে গিয়ে যদি বাটামটা ভেঙে না পড়ত। ভেতরে ভেতরে যে এত ঘুণ ধরেছিল সেটা বুঝতেই
পারিনি।
এখন থাক, আর লিখব না। বেঁচে থাকলে আরও অনেক
লেখা যাবে।
প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে।
সকাল সকাল উঠতে হবে।
কত কাজ পড়ে রয়েছে!
সবার আগে, মিস্ত্রি ডেকে ওই সিলিংটা সারাতে
হবে। বাটামটাও পাল্টাতে হতে পারে।
পুরাণাস্ত্র কথা (ছড়া)
শ্রীবরুণ, ২৫/০৭/২০২১
মুষ্টিবদ্ধ অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধক্ষেত্র কম্পময়
শৌর্য-বীর্য রক্ষা কিংবা আত্মরক্ষা, শত্রুক্ষয়
ভল্ল, চক্র-সুদর্শন, আগ্নেয়াস্ত্র, ঢাল-কৃপাণ
তোমর, অসি, ব্রহ্ম-অস্ত্র, পট্টিশ, পাশ, ধনুর্বাণ
সর্পরজ্জুবদ্ধ শত্রু নাগপাশ বাণে ভয়-উদ্বেল
গড়ুরাস্ত্র, বৈষ্ণবাস্ত্র, পাশুপত্, সীর, শক্তিশেল
ইন্দ্র হস্তে বজ্র গর্জে, বরুণ হস্তে অম্বুবাণ
গদা হস্তে বৃকোদর-হনুমন্ত-জাম্ববান
হলস্কন্ধে বলভদ্র, পরশুরামের কুঠার্-হাত
শতঘ্নীতে সৈন্যশত ছত্রভঙ্গ ধূলিস্যাৎ
চন্দ্রহাসে অর্ধ-চন্দ্র, শক্তিশেলাস্ত্র, গাণ্ডিব
খড়্গ হস্তে রণচণ্ডী, ত্রিশূল হস্তে রুদ্র শিব
জৃম্ভকাস্ত্রে যুদ্ধক্ষেত্রে নিদ্রামগ্ন শত্রুগণ
দর্পণাস্ত্রে যুগ্মনেত্রে তীব্র রশ্মি বিচ্ছুরণ
সপ্তহস্ত লম্ব বংশে তীক্ষ্ণ ফলক যুক্ত প্রাস
বীর হস্তে শক্ত যষ্টি, দুষ্ট-বক্ষে শঙ্কা ত্রাস…
………………………………
এই ছড়া রচনার নেপথ্যকাহিনি
যে সকল
রসিকবন্ধুরা রসাস্বাদনের উদ্দেশ্যে আমার গল্প-কবিতা পাঠ করে থাকেন, তাঁরা এই ছড়াটি
পড়ে একটু হতাশ হবেন। কারণ সাহিত্যের যে ‘ব্যঞ্জনা’ অর্থাৎ যা কাব্যসাহিত্যকে
সার্থক করে তোলে, সেটা এই ছড়ায় ছিটেফোঁটাও নেই। তবে লিখলাম কেন? হ্যাঁ, এটাই আসল
প্রশ্ন, এবং এর সরাসরি উত্তর হচ্ছে ‘লোকশিক্ষা’। এই ‘লোকশিক্ষা’ শব্দটি পড়ার সঙ্গে
সঙ্গে কেউ যদি ভেবে থাকেন যে আমি জ্ঞান দিতে এসেছি তবে সেটা ভ্রান্ত ধারণা, এবং
সেই ধৃষ্টতাও আমার নেই। কেউ হয়তো রবীন্দ্রনাথকে কোট করবেন— ‘লোক
যদি সাহিত্য হইতে শিক্ষা পাইতে চেষ্টা করে তবে পাইতেও পারে, কিন্তু সাহিত্য লোককে শিক্ষা
দেবার জন্য কোনো চিন্তাই করে না। কোনো দেশেই সাহিত্য ইস্কুল-মাস্টারির ভার লয় নাই’ (বাস্তব)। হ্যাঁ, গুরুদেবের কথাটা
শিরধার্য। তবে আমাদের এও ভুললে চলবে না যে বিদ্যাসাগর যদি সাহিত্য রস-চর্চাতেই
নিজেকে ডুবিয়ে রাখতেন এবং বর্ণমালা নিয়ে না ভাবতেন তাহলে কিন্তু আমরা অনেক পিছিয়ে
পড়তাম।
হয়তো
সে কথা ভেবেই এমন কিছু লিখতে ইচ্ছে করে যা সাহিত্যতত্ত্বের দিক থেকে নয়,
সমাজতত্ত্বের দিক থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই ছড়ার টার্গেট মূলত শিশু-কিশোর, এবং
এর নেপথ্যে রয়েছে মূলত চারটি কারণ—
১/ পুরাণকালে
যেসব অস্ত্র-শস্ত্র ব্যবহার হত সে সম্পর্কে একটা ধারণা প্রস্তুত করা। এই ছড়াটিতে
প্রায় ৩১ প্রকার অস্ত্রশস্ত্রের নাম
তালিকাভুক্ত হয়েছে, যেমন— ভল্ল, আগ্নেয়াস্ত্র,
সুদর্শন চক্র, ঢাল-কৃপাণ, তোমর (শাবল সদৃশ), অসি, ব্রহ্ম-অস্ত্র, পট্টিশ (দুই দিকে ধারালো তরবারি বিশেষ), পাশ (প্রায় দশ হাত লম্বা রজ্জুযুক্ত এই অস্ত্র মাথার ওপর একবার ঘুরিয়ে নিক্ষেপ
করে শত্রুকে বেঁধে ফেলা হয়), ধনুর্বাণ, নাগপাশ (শত্রুকে বেঁধে ফেলা
সর্পরজ্জু বিশেষ), গড়ুরাস্ত্র (নাগপাশ-বাণ
বিফলকারী অস্ত্র), বৈষ্ণবাস্ত্র, পাশুপত (শিবের
ত্রিশূল), সীর (লাঙলের মতো অনেকটা, তবে
লৌহ নির্মিত), শক্তিশেল (রাবণ এই
অস্ত্র প্রয়োগ করে লক্ষ্মণকে মৃত্যুমুখে ফেলছিল),
বজ্র, অম্বুবাণ, গদা, হল, কুঠার, শতঘ্নী (একসঙ্গে
একশজনকে প্রহার করার ক্ষমতা রাখে), চন্দ্রহাস (অর্ধচন্দ্রাকার লোহার ফলক), গাণ্ডিব (অর্জুনের ধনুক), খড়্গ, ত্রিশূল, জৃম্ভকাস্ত্র
(এই অস্ত্র প্রয়োগ করলে শত্রু ঘুমিয়ে পড়ে),
দর্পণাস্ত্র (আয়নার রশ্মি দিয়ে
শত্রুর দৃষ্টিতে বিঘ্ন ঘটানো), প্রাস (ছুঁড়ে মারা হয়), যষ্টি (লাঠি, আত্মরক্ষার
জন্য সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ও সুলভ হাতিয়ার)।
২/ শিশু-কিশোরদের
মনে ও কানে ছন্দবোধ নির্মাণ। এখানে শ্বাসাঘাত প্রধান অর্থাৎ স্বরবৃত্ত/দলবৃত্ত
ছন্দের প্রয়োগ করা হয়েছে, রুদ্ধদল-মুক্তদল একমাত্রা। এখানে পূর্ণ পর্ব চার মাত্রা
করে এবং প্রান্ত্যপর্ব তিন মাত্রার, যেমন--- ৪ + ৪ + ৪ + ৩ । শুধু শেষ পঙক্তিতে
‘বীর’ শব্দটির ‘বী’ দীর্ঘ উচ্চারিত করে এবং ‘র’কে স্বরান্ত উচ্চারণ করে শব্দটাকে
দুই মাত্রায় ধরতে হবে—
১
১ ১ ১
১ ১ ১ ১
১ ১ ১ ১
১ ১ ১
বীর
হস্তে / শক্ত যষ্টি / দুষ্ট-বক্ষে / শঙ্কা ত্রাস…
৩/
উচ্চারণ অনুশীলন। এই ছড়াটা ছন্দ ধরে ধরে দ্রুত পড়তে গেলে যুক্তব্যঞ্জনের অত্যধিক
ব্যবহারের ফলে জিহ্বার দ্রুত স্থানপরিবর্ত ঘটে। ফলে উচ্চারণ-বিভ্রাটের সম্ভাবনা
থাকে। ইংরাজিতে যাকে বলে Tongue Twisters, যেমন— ‘I Wish to wash my Irish
wristwatch’, ‘She Sells sea-shells on the sea-shore’, ‘How much wood would a
woodchuck chuck if a woodchuck could chuck wood?’ ইত্যাদি। এরকম বাংলাতেও অনেক
আছে, যেমন— ‘জলে চুন তাজা, তেলে চুল তাজা’, ‘পাখি পাকা পেঁপে
খায়’, ‘নীল রিলে লাল রিল, লাল রিলে নীল রিল’, ‘কাঁচা গাব পাকা গাব, পাকা গাব কাঁচা
গাব’ ইত্যাদি।
৪/ যুক্তব্যঞ্জনের ব্যবহার (৪৭ টি)— যেসব শিশুরা যুক্তব্যঞ্জন শিখছে তাদের
কাছে এই ছড়াটি লাভদায়ক হতে পারে, কারণ এখানে প্রায় ৪৭ প্রকার যুক্তব্যঞ্জনের
ব্যবহার রয়েছে (হ্যাঁ, দুচারটে অবশ্যই বাদ গেছে, কারণ ছড়ায় বিষয়ভিত্তিক শব্দচয়ন ও
পরিসরের একটা সীমাবদ্ধতা থাকে)। যেমন— ষ্ট, দ্ধ, ক্ষ, ত্র, ম্প, র্য, ত্ম, ল্ল, র্শ,
গ্ন, ব্র, হ্ম, ট্ট, র্ব, র্প, জ্জ, দ্ব, ষ্ণ, ক্ত, স্ত, জ্র, র্জ, ম্ব, ন্ত, ম্ব,
স্ক, ন্ধ, দ্র, ঘ্ন, ন্য, ঙ্গ, ণ্ড, ড়্গ, ণ্ড, দ্র, ম্ভ, গ্ম, শ্ম, চ্ছ, প্ত, ক্ষ্ণ,
প্র, ষ্ট, ঙ্ক ।
বেশ কয়েকটি আবার ত্রিব্যঞ্জনযুক্ত শব্দও রয়েছে, যেমন— স্ত্র (স্+ত্+র),
র্ধ্ব (র্+ধ্+ব), ন্দ্র (ন্+দ্+র) ইত্যাদি।
এছাড়াও প্রতিটি স্বরধ্বনির ব্যবহার রয়েছে, যেমন— অ= অস্ত্র, আ= আত্ম/রক্ষা,
ই= ইন্দ্র/শক্তি, ঈ= বীর, উ= উদ্বেল/যুদ্ধ, ঊ= ত্রিশূল, ঋ= কৃপাণ, এ= হস্তে, ঐ= বৈষ্ণবাস্ত্র,
ও= তোমর, ঔ= শৌর্য ইত্যাদি।
অবশ্য এগুলো আমি সচেতন ভাবে করিনি, পরে খুঁজে খুঁজে বের করেছি। এতে যদি
দশের কাজে লাগে তবে মন্দ কি ?
সাত বাৰৰ নাম (অসমীয়া শিশু কবিতা)
শ্রীবৰুণ, ০২/০৭/২০২১
সোমবাৰতে সর্বে ককা সর্থেবাৰী যায়
মঙ্গলতে মন্টুমণি মণ্ডা-মিঠৈ খায়
বুধবাৰে বাসন্তী বালাৰ তাঁতত খদমদম
বৃহস্পতিত শহা শুলে মুঠেও নাপায় গম
শুক্রবাৰে শক্তি মামাৰ মুখত নাহে মাত
শনিবাৰে শুভ্রা সানে নিম হালধি গাত
দেওবাৰে কণমইনাহঁতৰ খেল-ধেমালিৰ দিন
আনন্দতে নৃত্য কৰে তাক-ধিনা-ধিন-ধিন
…………।।
সাত বারের নাম (বাচ্চাদের বাংলা ছড়া)
সোমবারেতে সুদীপ্ত দা সর্থেবাড়ি যায়
মঙ্গলেতে মন্টু মোদক মণ্ডা-মিঠাই খায়
বুধবারে বাসন্তী বালা গঙ্গাতে দেয় ডুব
বৃহস্পতি বারে বিধান বংশী বজায় খুব
শুক্রবারে শুভ্রা মাখে গায়ে হলুদ নিম
শনিবারে শান্তনু খায় পান্তা ভাতে ডিম
রবিবারে বাচ্চাগুলোর রং-তামাশার দিন
সবাই মিলে নাচতে থাকে তাক-ধিনা-ধিন-ধিন
অসমের জাতীয় উদ্যান (ছোটদের
ছড়া)
শ্রীবরুণ, ২৭/০৬/২০২১
কাজিরঙা উদ্যানে
ঘোরে ফেরে গণ্ডার,
এক খানা শিং তাই
বিখ্যাত নাম তার।
ডিব্রু শইখোয়ায়
ঘোড়াদের বিচরণ,
শোনা যায় হামেশাই
পশুদের গর্জন।
মানসের জঙ্গলে
ঘাস খায় বুনো
মোষ,
ক্ষেপে গেলে নাক দিয়ে
করে শুধু ফোঁস ফোঁস।
নামেরির হরিণেরা
ছুটে যায় লাফিয়ে,
পিছু পিছু চিতা বাঘ
প্রায় যায় হাঁপিয়ে।
ওরাঙের বনে বনে
কত পাখি গান গায়,
হাতি এসে শুঁড় দিয়ে
লতাপাতা ছিঁড়ে খায়।
দিহিং পাটকাইয়ে
ঘুরে ফেরে ভল্লুক,
ডালে ডালে ঝোলে সেথা
লেজহীন উল্লুক।
রাইমনা উদ্যানে
বেঙ্গল টাইগার,
শত শত প্রজাপতি
ধনেশের সমাহার।
জাতীয় উদ্যানে,
চলো যাই ছুটিতে,
জিপ সাফারি অথবা
পিঠে চড়ে হাতিতে।