Sunday 9 September 2018

ডার্টি ফ্লাওয়ার


ডার্টি ফ্লাওয়ার
বরুণ কুমার সাহা, গুয়াহাটি, ১০/০৮/২০১৭



মন্দিরের বারান্দায় ঘণ্টা ঝুলছে। সেটার প্রতিচ্ছবি রিফ্লেক্ট করছে মার্বেল পাথরের ধবধবে মেজেতে। দানপাত্রটিও শ্বেতপাথরের। সম্মুখের ফুলের বাগানটিও টিপটপ, ফিটফাট গাছগুলি যেন সেজেগুজে বসে থাকে সারাক্ষণ। একটুও এলোমেলো ভাবে ডালপালা ছড়ানোর উপায় নেই। যমদূত-মালি অস্ত্র হাতে সদায় প্রস্তুত।


বাগানের একটি সাদা গোলাপ পাশেরটিকে বলছে

দ্যাখ ভাই, আমাদের জীবনটা কতো সাদামাটা একঘেয়ে, তাই না! ওই দ্যাখ বারান্দায়! মহিলাটি খোপায় গোলাপি গোলাপ।
হম্, ঠিক ঠিক। ওদের গোলাপি রঙটা ধার করে আমরা নিজেদের পরিচয় দিচ্ছি গোলাপ। অথচ জাত আমাদের সাদা। কি লজ্জা!
আর ওই দ্যাখ, মন্দিরের ওই কোণায় কলেজ পড়ুয়া ছেলেটি বান্ধবীর হাতে একটি টকটকে লাল গোলাপ গুঁজে দিচ্ছে!
হম্। কি ভারি আদর! হায়-রে! ওদের কেউ রাখে মাথায় তুলে, আর কেউ গোঁজে হৃদয়ে। আর আমরা?
আমরা আর কী! সারাদিন এভাবেই বাগানের জেলখানায় হাঁ করে বসে থাকি। হাতের মুঠোয় কিংবা খোপায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো তো দূরের কথা, একটু সময় যে হাত-পা ছড়িয়ে হাই তুলব তার উপায় নেই।


দীর্ঘ-নিঃশ্বাস। তারপর দ্বিতীয় গোলাপটি প্রথমটিকে আদ্র কন্ঠে বলতে লাগল

শুনেছি মন্দিরের ভিতরের ভগবান নাকি সব জানেন, সব বোঝেন। দেখছো না সবাই কী-ভাবে মাথা ঠ্যাকাচ্ছে! চলো আমরাও তার কাছে কিছু প্রার্থনা করি। দেবতার চরণে তো কখনো ঠাঁই পাইনি, অভিশপ্ত। দূর থেকেই তারে ডাকি।

এরপর সাদা গোলাপদুটি চোখ বন্ধ করে প্রার্থনা করতে লাগলহে ঈশ্বর, আমাদের সাদামাটা জীবন থেকে মুক্তি দিও। জীবনটা রঙিন করে তোলো। আমরাও যাতে মানুষের হৃদয়ে স্থান পাই, আমরাও যাতে মানুষের মাথায় ঠাঁই পাই, আমরাও যাতে তোমার চরণে মাথা গুঁজতে পারি।।


একটু পরে গোলাপদুটি সত্যি-সত্যিই লাল হয়ে উঠল। এক্কেবারে টকটকে লাল। ধবধবে মন্দিরের ঝকঝকে পরিবেশের পরিপাটি বাগানের ফুটফুটে সাদা গোলাপদুটি সত্যি-সত্যিই লাল হয়ে উঠল। ডাল সহ সমস্ত গাছ হেলে দুলে উঠেছে। গাছের অন্যান্য সফেদ ফুলগুলি যেন মুখ টিপে টিপে হাসছে, আর বলছে, যাহ্‌, বেঁচে গেলাম। বাগানের পাশের রাস্তা দিয়ে দর্শনার্থীদের কিচির-মিচির।


সদ্য রক্তবর্ণ সাদা গোলাপদুটি চোখ মেলতেই দেখল, একটি লোক কি যেন চিবোতে চিবোতে চলে যাচ্ছে। ঠোঁটদুটি তার লাল, হাতে সাদা রুমাল। মালি চিৎকার করে খিস্তি ঝাড়ল

           অন্ধ নাকি মশাই? বাগানে কেউ পিক ফ্যালে? অসভ্য কোথাকার!

থলথলে চর্বিতে ঢাকা লোকটি কিন্তু ভ্রূক্ষেপই করলেন না। সোজা গটগট করে উঠে গেলেন মন্দিরের বারান্দায়। লাইন ধরতে হল না।

তারপর যমদূত মালি এসে ঘ্যাঁচ করে কেটে ফেলল কলঙ্কিত ফুলদুটিকে



2
পুলিস সুপার ইতিমধ্যে গল্পটি প্রায় সাতবার পড়ে ফেলেছেন। কিন্তু এর অর্থ এখনও বুঝে উঠতে পারেননি। হ্যাঁ, মাধবীলতা তার সুইসাইট নোটে এই গল্পটুকু ছাড়া আর একটা শব্দও লেখেনি। মাধবীলতা ঘোষ। বয়স সতেরো। বরণ উজ্জ্বল। ঠিকানা শকুন্তলা বিধবা আশ্রম । গোপাল মন্দিরের ঠিক উল্টো দিকে। সুইসাইড লোকেশন সাগরদিঘি পার। সুইসাইডের ধরণ হ্যাঙ্গিং, কৃষ্ণচূড়ার ডালে। আর সুইসাইড নোটটা পাওয়া গেছে তার পরনের সাদা থানের আঁচলে

No comments:

Post a Comment